Monday , 29 April 2024
Breaking News

১০৫ রানে জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়ালো বাংলাদেশ

সিরিজ আগেই হাতছাড়া হয়ে গেছে। শেষ ওয়ানডেটি বাংলাদেশের জন্য ছিল কেবলই মান রক্ষার। এমন এক ম্যাচে এসে অবশেষে জ্বলে উঠলো টাইগার বাহিনী। জিম্বাবুয়েকে ১০৫ রানে হারিয়ে সান্ত্বনার জয় তুলে নিলো তামিম ইকবালের দল।

প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৫৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৩২.২ ওভারেই ১৫১ রানে গুটিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিক দলের এই রানও হয়েছে শেষ উইকেট জুটির কল্যাণে। ৮৩ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর এনগারাভা আর নিয়াচি যোগ করেন ৫৮ বলে ৬৮ রান।

শেষ ম্যাচে হাসলেও ভুলে যাওয়ার মতো এক সফর গেলো বাংলাদেশের। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা ১-২ ব্যবধানে হেরেছে, এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও একই ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল সফরকারী দল।

আগের দুই ওয়ানডেতে ৩০৩ আর ২৯০ রানের পুঁজি নিয়েও পারেনি বাংলাদেশ। এবার পুঁজি ছিল আরও কম, ২৫৬ রানের। তবে এবার আর হতাশ করেননি টাইগার বোলারররা।

প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন পেসার হাসান মাহমুদ।ডানহাতি এই পেসারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন তাকুদজানাশে কাইতানো (০)।

পরের ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের আঘাত। তাদিওয়ানাশে মারুমানি (১) ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে হারান স্টাম্প। ৭ রানে ২ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।

এবাদত হোসেন টেস্টে নিজেকে প্রমাণ করেছেন, এবার ওয়ানডে অভিষেকটাও রাঙালেন এই পেসার। প্রথম ম্যাচে উইকেটের জন্য তার অপেক্ষা করতে হলো মাত্র ৯ বল।

শুধু একটি উইকেট নয়, এক ওভারে টানা দুই বলে দুই শিকার করেন এবাদত। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে এবাদতের লাফিয়ে উঠা ডেলিভারি বুঝতে না পেরে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন ওয়েসলে মাদভেরে (১)।

পরের ডেলিভারি তো ছিল রীতিমত বিস্ময়ের। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজা উইকেটে আসতে না আসতেই এবাদতের দুর্দান্ত ইয়র্কারে কিছু বুঝতে না পেরে হন বোল্ড।

প্রথম ওয়ানডের সেঞ্চুরিয়ান ইনোসেন্ট কায়াকে (১০) এলবিডব্লিউ করেন তাইজুল। একটু চড়াও হতে গিয়েছিলেন টনি মুঙ্গোয়া। ১৮ বলে ১৩ রান করে তিনিও তাইজুলের টার্নে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন। পঞ্চাশের আগেই (৪৯ রানে) ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে জিম্বাবুয়ে।

সেখান থেকে লজ্জা এড়ানোর মিশনে নামেন লুক জঙউই আর ক্লিভ মাদান্দে। ৪৩ বল খেলে তারা গড়েন ২৮ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত এই জুটিটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টারকে তুলে মারতে গিয়ে কভারে বিজয়ের ক্যাচ হন জঙউই (১৫)।

লেজটা ছেঁটে দিয়েছেন মোস্তাফিজিই। নিজের পরের ওভারে আরও এক সেট ব্যাটারকে আউট করেন ফিজ। ২৪ রান করা মাদান্দে টপ এজ হয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকের গ্লাভসবন্দী হন। ওই ওভারে লরি ইভান্সকেও (২) আউট করেন কাটার মাস্টার।

সম্মান বাঁচানোর ম্যাচ। তাতে শুরুতেই সম্মানহানি হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। জিম্বাবুইয়ান বোলারদের তোপে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে এনামুল হক বিজয় আর আফিফ হোসেনের ব্যাটে চড়ে ৯ উইকেটে ২৫৬ রানের পুঁজি পেয়েছে টাইগাররা।

হারারেতে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সাবধানী শুরুই করেছিলেন তামিম ইকবাল। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে খোলস ছেড়ে বের হওয়ার আভাস দেন তিনি। অধিনায়কের দেখাদেখি হাত খুলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের গতি বাড়ান আরেক ওপেনার বিজয়ও।

কিন্তু ইনিংসের অষ্টম ওভারের তৃতীয় বলে হয় সর্বনাশ। অফসাইডের দিকে খেলেই সিঙ্গেলের জন্য ডাক দেন বিজয়। সাড়া দিয়ে প্রায় মাঝ পিচে চলে যান তামিম। কিন্তু স্কয়ার অঞ্চল থেকে বলটি থামিয়ে দেন ওয়েসলে মাধভের। তার থ্রো ধরে স্ট্যাম্প ভেঙে ১৯ রান করা তামিমের বিদায়ঘণ্টা বাজান এনগারাভা।

সেই ওভারেই এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন একটি ছক্কা হাঁকান বিজয়। কিন্তু পরের ওভারেই ঘটে বিপর্যয়। ওভারের প্রথম বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন নাজমুল শান্ত। দুই বল পর আপার কাট করে থার্ড ম্যাচে এনগারাভার দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন মুশফিকুর রহিম। দুজনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি।

দুই ওভারের মধ্যে তিন উইকেট হারালেও সাহস হারাননি বিজয়। বরং যেখানে থেমেছিলেন তামিম, সেখান থেকেই দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন এ ডানহাতি ওপেনার। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারেই ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান তিনি। দুই ওভার পর ব্র্যাডলি ইভান্সকে ভাসান স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে।

ইনিংসের ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ব্যক্তিগত পঞ্চাশ পূরণ করেন বিজয়। সাবলীল ব্যাটিংয়ে মাত্র ৪৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ের মারে এ রান করেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে বিজয়ের এটি পঞ্চম ফিফটি, চলতি সিরিজের দ্বিতীয়। ফিফটির পরেও থামেনি বিজয়ের ব্যাট।

২১তম ওভারে ইভান্সের করা পায়ের ওপরের ডেলিভারিতে দারুণ এক ফ্লিক শটে সোজা গ্যালারির ছাদে পাঠিয়ে দেন এ ডানহাতি ওপেনার। পরের বলেই আবার হাঁকান বাউন্ডারি। অপরপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহ ধীর ব্যাটিং করায় দলীয় শতরান পূরণ করতে খেলতে হয় এই ২১তম ওভার পর্যন্ত।

মনে হচ্ছিল প্রথম ম্যাচের না পাওয়া সেঞ্চুরিটি আজ হয়তো করে ফেলবেন বিজয়। কিন্তু লুক জঙউইর করা ২৫তম ওভারে ঘটে বিপক্ষে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে লেট কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন বিজয়। তার ৭১ বলে ৭৬ রানের ইনিংসে ছিল ৬ চারের সঙ্গে ৪টি ছয়ের মার।

এরপর আফিফ হোসেনের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ৫৭ বলে ৪৯ রানের জুটি। জুটিটি ভাঙে ধীরগতির মাহমুদউল্লাহ এনগারাভার একটি বল উইকেটে টেনে এনে বোল্ড হলে। ৬৯ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩৯ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।

এরপর মেহেদি হাসান মিরাজও ২৪ বলে ১৪ রান করে সিকান্দার রাজার বলে এলবিডব্লিউ হন। তাইজুল রানআউট হন ৫ রানে। ২২০ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সেখান থেকে আফিফ হোসেন ধ্রুব প্রায় একাই দলকে লড়াকু পুঁজি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থেকে বাংলাদেশকে এনে দেন ২৫৬ রানের সংগ্রহ। ৮১ বলে আফিফের ৮৫ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৬ বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কার মার।

জিম্বাবুইয়ান বোলারদের মধ্যে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন ব্র্যাড ইভান্স আর লুক জঙউই।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial