Monday , 29 April 2024
Breaking News

মার্কিন নাগরিকের আইফোন পেয়ে ফিরিয়ে দিলেন রিকশাচালক

আমিনুল বলেন, মুঠোফোনটির মালিককে খুঁজে বের করাতে তা চালু করার দরকার ছিল। তাই তিনি উত্তর বাড্ডার একটি দোকানে গিয়ে চার্জার কেনার চেষ্টা করেন। কিন্তু দোকানদার চার্জারের দাম অনেক বেশি চান। তাই তিনি চার্জার না কিনে ফিরে আসেন। পরে তিনি মুঠোফোনটির সিম খুলে ফেলেন। নিজের মুঠোফোনে সিমটি চালু করেন। সিম চালু করার পর এক নারীর ফোন আসে। তিনি মুঠোফোনটির মালিকানা দাবি করেন। তখন তিনি ওই নারীকে মুঠোফোনটি নিয়ে যেতে বলেন। পরে তিনি পুলিশের মাধ্যমে মালিকের কাছে মুঠোফোনটি ফিরিয়ে দেন।

আজ বুধবার সীমা আহম্মেদ নামের ওই নারীর সঙ্গে মুঠোফোনে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি জানান, মুঠোফোনটি তাঁর ছেলে স্যামি আহম্মেদের। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। সেদিন তিনি ছেলেকে নিয়ে রিকশায় করে রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। পথে মুঠোফোনটি হারিয়ে ফেলেন। মুঠোফোনে চার্জ ছিল না। তাই কলও করা যাচ্ছিল না। পরে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একপর্যায়ে সিম চালু পান। ফোন করলে এক রিকশাচালক ধরেন। তিনি মুঠোফোনটি পাওয়ার কথা জানান। মুঠোফোনটি নিয়ে যেতে বলেন। তাঁরা পুলিশকে এ তথ্য জানান। পরে আমিনুল পুলিশের কাছে মুঠোফোনটি পৌঁছে দেন। মুঠোফোন ফিরে পেয়ে তাঁরা বেশ খুশি।

গুলশান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন নাগরিক সীমা আহম্মেদ তাঁর ছেলেকে নিয়ে রিকশায় চড়ে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন। সে সময় অসাবধানতাবশত মুঠোফোনটি পড়ে যায়। পরে তিনি গুলশান থানায় জিডি করেন। মুঠোফোনটিতে রোবট তৈরির একটি প্রকল্পের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত ছিল। আমিনুল মুঠোফোনটি পেয়ে সততার সঙ্গে ফেরত দিয়েছেন।

এএসআই আবদুল কাদির বলেন, ‘আমি প্রায় সাত বছরে সাড়ে চার হাজার মুঠোফোন উদ্ধার করেছি। কিন্তু কখনোই এমন সততার দৃষ্টান্ত দেখিনি। আমাদের সবার আমিনুলের কাছ থেকে শেখা উচিত।’

আমিনুল জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে। স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে নিয়ে তিনি থাকেন বাড্ডা এলাকায়। জেসমিন একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাঁদের দুই সন্তান আছে। তারা নানির কাছে থেকে লেখাপড়া করে।

অভাবের কারণে আমিনুল অষ্টম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া করেননি। তবে তিনি কষ্ট করে হলেও তাঁর দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাতে চান। সন্তানদের নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন।

ঢাকায় থাকাখাওয়া, লেখাপড়ার খরচ অনেক বেশি। তাই সন্তানদের গ্রামে রেখেছেন আমিনুল। তিনি প্রতি মাসে সেখানে খরচের টাকা পাঠিয়ে দেন।

আমিনুল বলেন, তিনি গরিব। সংসারে অভাব আছে। কিন্তু অন্যের সম্পদের ওপর তাঁর কোনো লোভ নেই। সততা নিয়েই বাঁচতে চান তিনি।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial