Monday , 29 April 2024
Breaking News

জানুয়ারি থেকে সবার জন্য বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা

দেশে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সরকারি হাসপাতালে সবার জন্য বার্ষিক হেলথ চেকআপ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর জন্য ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট প্যাকেজের অর্থ দিয়ে হেলথ চেকআপ করতে পারবে সাধারণ মানুষ। তখন দ্রুত সময়ে রোগ শনাক্ত করা এবং অসংক্রামক ব্যাধিতে (নন কমিউনিকেবল ডিজিজ) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কমবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নবজাতকের বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান মন্ত্রী। এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, দেশের সকল হাসপাতালে জনগণকে বার্ষিক চেকআপ করাব। এতে করে অনেক লোকের আর্লি ডায়াগনোসিস হবে। মানুষ অসুস্থ হলে যদি রোগ সম্পর্কে সঙ্গে সঙ্গেই জানতে পারে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আসতে পারবে। এক্ষেত্রে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হওয়ারও সুযোগ থাকে। এমনকি এটি শুরু করতে পারলে রোগীদের বিদেশমুখী প্রবণতাও কমে আসবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বার্ষিক চেকআপ সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। তবে এই সেবার বিনিময়ে একটা চার্জ আমরা ধরব। এটি প্যাকেজ সিস্টেম হবে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করে দেব। কারণ ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজে আসতে হলে এটা আমাদের লাগবে। আমরা হয়তো আগামী ১-২ মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করব। বাস্তবায়ন পর্যায়ে যেতে হয়তো তিন মাস লাগবে। তবে আগামী বছরের শুরুতে আমরা পুরোপুরিভাবে চালু করতে পারব।

৫০ জেলায় স্ক্যানু: দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫০ জেলায় নবজাতকের সুরক্ষায় বিশেষায়িত স্পেশাল কেয়ার নিউবর্র্ন ইউনিট (স্ক্যানু) চালু করেছে সরকার। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে স্ক্যানু ইউনিট চালু করা হবে। এসব স্ক্যানু ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারের নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের নামে নামকরণ হবে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্ক্যানুকে আমরা শিশু রাসেলের নামে উৎসর্গ করলাম। সারা দেশের প্রতিটি হাসপাতালেই রাসেলের নামে স্ক্যানুর নামকরণ হবে। এর মাধ্যমে শিশু রাসেলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরমধ্যে যেখানে যেই অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, আমরা সেটি ব্যবস্থা করব।

গতকাল একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্ক্যানুর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানান। এ সময় মন্ত্রী স্ক্যানু চালুতে সহায়তার জন্য ইউনিসেফ, ইউএসএইড, সেভ দ্যা চিলড্রেনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

মন্ত্রী বলেন, ৬৪ জেলার মধ্যে ৫০টিতে স্ক্যানু স্থাপনে সক্ষম হয়েছি। আশা করি খুব দ্রুতই বাকিগুলোতে স্থাপন হয়ে যাবে। বর্তমানে দেশে প্রতি হাজারে ৩০ শিশু মারা যায়। কিন্তু এসডিজি অর্জন করতে হলে এই হার কমিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে স্ক্যানু কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

জাহিদ মালেক বলেন, দেশে একসময় শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ১০০-এর কাছাকাছি ছিল, এখন কমে ৩০-এ এসেছে। আমরা ১২তে নামিয়ে আনতে চাই। এসডিজি গোল অর্জনে আমাদের মা ও শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে স্ক্যানু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মন্ত্রী বলেন, স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটটি মূলত আইসিইউর মতো কাজ করে। সেখানে শিশুদের যেন সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়, এটি আমরা নিশ্চিত করব। একজন নবজাতক শিশু ওই সময়টাতে কথা বলতে পারে না। তারা নির্ভর করে অনেকটা মা আর পরিবেশের ওপর। এখন যেহেতু স্ক্যানু সিস্টেম থাকছে, সেখানে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকছে, যে কারণে শিশুমৃত্যুর শঙ্কা কমে যায়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সরকারের এসডিজি অর্জনে এই স্ক্যানু কাজ করবে। তবে এটা ঠিক যে, যেকোনো কিছু উদ্বোধন ও শুরু করা সহজ, কিন্তু সেটা ধরে রাখা কঠিন। আমরা চেষ্টা করব স্ক্যানুটা যেন হারিয়ে না যায়, যন্ত্রপাতি যেন নষ্ট হয়ে না পড়ে থাকে।

অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, স্ক্যানু চালুর ফলে ঢাকামুখী রোগীদের ভিড় কমবে। কিন্তু কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে আবারও চাপ বেড়ে যাবে। আমরা অধিদপ্তর থেকে চেষ্টা করব যেন সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রমটি চলমান থাকে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিশুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, নবজাতকের সেবায় স্ক্যানু দারুণ ভূমিকা রাখবে। আমরা দেখি যে, দেশে প্রতি এক হাজার নবজাতকের মধ্যে ২৮ দিনের মধ্যে ১৮ শতাংশ মারা যায়। ১৮ শতাংশ নবজাতক মারা যায় ২-৮ দিনের মধ্যে।

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ৫০টি হাসপাতালে স্ক্যানু চালু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১৪টি জেলায় নেই। আশা করছি বাকি জেলাগুলোতেও  দ্রুত চালু হয়ে যাবে। তবে স্ক্যানুর চেয়ে মাদার স্ক্যানুটা বেশি জরুরি। মাদার স্ক্যানুতে মায়ের সঙ্গে নবজাতকও থাকবে। এতে শিশু সুরক্ষিত থাকবে, নার্স ও চিকিৎসক কম লাগবে।

ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, এসব স্ক্যানু চালুর চেয়ে মেইনটেনেন্স জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ জন্য রেপিড রেসপন্স টিম (আরআরটি) প্রস্তুত করেছে। এই টিম যদি ঠিকমতো কাজ করে, তাহলেই এই স্ক্যানুগুলো চলবে।

নিবন্ধন ছাড়া শিশুদের টিকা নয়: এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ৫-১১ বছর বয়সী শিশুদের করোনার টিকা প্রদান পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। আগামী ২৫ আগস্ট থেকে সিটি করপোরেশনগুলোতে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই স্কুলগুলোতে শিশুদের টিকা দেওয়া হবে। নিবন্ধন ছাড়া শিশুকে টিকা দেওয়া যাবে না।

সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখন ভালো আছে। কভিডে মৃত্যুর হার শূন্যে ও আক্রান্তের হার চার শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তবে এখনো অনেকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেননি। দ্বিতীয় ডোজ ৯০ লাখ মানুষ নেয়নি। এ ছাড়া বুস্টার ডোজ মাত্র চার কোটি মানুষ নিয়েছে। কেউ প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ না নিলে বুস্টার ডোজ পাবেন না।

মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বাড়ায় সারা দেশেই জনবলের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নতুন জনবল কাঠামো তৈরি করে নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কভিডের মধ্যে ১৫ হাজার চিকিৎসক ও ২০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী সব হাসপাতালে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন, স্বাস্থ্য সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, সিভিল সার্জন মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান চৌধুরী, জেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহাউদ্দিনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial